Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংষ্কৃতি

ভাষা ও সংস্কৃতি

মানিকগঞ্জ সদরের ভাষা ও সংস্কৃতি

 

ভাষা

 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা অঞ্চলের ভাষার উচ্চারণ এবং শব্দের ব্যবহারজাত কিছু স্বকীয়তা রয়েছে, যেমন থাকে প্রতিটি আঞ্চলিক এবং উপভাষার ক্ষেত্রে।

 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাষার সাধারণ বৈশিষ্টপূর্ণ রূপটিই হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষা। মানিকগঞ্জ সদরের ভাষায় স্বরধ্বনি ব্যবহারের নিজস্ব একটি রূপ লক্ষ্য করা যায়। মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় ‘ই’ ‘এ’ ‘এ্যা’ ‘আ’ ‘অ’ ‘ও’ ‘উ’ স্বরধ্বনিগুলি আদিতে, মধ্যে, অন্ত্যে বসে উচ্চারণের আলাদা দ্যোতনার এবং নিজস্বতা সৃষ্টি করে। যেমন- একটু শব্দকে ইটু, নিকাহ শব্দকে নিহ্যা, উই শব্দকে উচ্চারণ করে উলু হিসাবে। প্রায় সর্বত্র স্বরধ্বনির এমন ব্যবহার মানিকগঞ্জের ভাষাকে নিজস্বতা দিয়েছে, যদিও সময়ের পরিক্রমায় এমন প্রবণতা ক্রমশঃ কমে আসছে। মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় আনুনাসিক স্বরধ্বনির উচ্চারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্ষিত হয়নি। এ দিকটিও মানিকগঞ্জের ভাষার স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে। যেমন ‘পায়ে কাটা বিন্ছে’ এখানে কাঁটা শব্দ উচ্চারণে আনুনাসিক স্বরধ্বনি নেই। বাঁধন শব্দটি উচ্চারিত হয় বান হিসাবে। মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির বহুল প্রয়োগ লক্ষ্যনীয়। যেমন, মরছিই্, করছিই্, দ্যায়, ন্যায়্, দ্যাও,& ন্যাও্, (নিয়মিতঃ দ্বিস্বরধ্বনি) ইয়া (ইহা), দিয়া, বিয়া, নিও, দিও ( নিয়মিত দ্বিস্বরধ্বনি), কাইয়্যা(কাক)বিয়াই (বেহাই), কুইয়্যা (কুয়ো) (ত্রিস্বরধ্বনি) ইত্যাদি। মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কখনো কখনো পদের আদিতে ই ধ্বনি এ ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন, ইঁদারা > এন্দারা, ইজমালি > এজমালি। পদ মধ্যেও এমন প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন, ঢিল > ঢেল, মিল >মেল। পদান্তিকে ই ধ্বনি আ-কারও হয়, যেমন, পিড়ি > ফিরা, তেমনি > ত্যাম্বা, এমনি > এ্যাম্বা ইত্যাদি। মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার আরও কিছু উলে­খযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন,‘‘প্রচলিত বাংলা বর্ণমালায় ৩৮ টি ব্যাঞ্জন বর্ণ থাকলেও মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায়  মাত্র ২২টি ব্যঞ্জন ধ্বনি ব্যবহৃত হয়’’ (মানিকগঞ্জ জেলার লোক  সাহিত্য,পৃষ্ঠা-৬৯)। মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় ব্যঞ্জন ধ্বনির অবস্থান বিভিন্ন শব্দের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন, শকুন উচ্চারিত হয় হকুন, সকাল উচ্চারিত হয় হকাল, গল্প উচ্চারিত হয় গপ্পো, চাউল  উচ্চারিত হয় চাইল, ঘর উচ্চারিত হয় গর হিসাবে। এমন অসংখ্য বৈশিষ্ট্যে মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা বাংলা ভাষার মূল স্রোতধারায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।

 

 

সংস্কৃতি


    মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রতি ইঞ্চি  ভূমি গড়ে উঠেছে কালীগংগা, ধলেশ্বরী ও ইছামতির পলি-জলের নিবিড় ভালবাসায়। নদী বিধৌত এ জনপদের মানুষের সংস্কৃতিও তাই বিকশিত ও ঋদ্ধ হয়েছে স্বকীয় সত্তায়। এ অঞ্চলের প্রকৃতি, মানুষের ধর্ম, পেশা, লোকাচার, বিশ্বাস, মানিকগঞ্জের সংস্কৃতিকে ভিন্ন মাত্রায় বিকশিত করেছে।

 

ধর্মীয় সম্প্রীতি-সহনশীলতার সংস্কৃতিঃ 

‘‘বাঙালীর সংস্কৃতির বৃহত্তম অংশের বিকাশ ধর্মকেই আশ্রয় করে । ধর্ম ভিত্তিক সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা ছেড়ে দিয়ে দৈনন্দিন জীবনের নিত্য নৈমিত্তিকতার আচরণবিধির মধ্যেও বাঙালীর ধর্মীয় মানসিকতার প্রাধান্য ঘটেছে।.... হাতে শাখা, সিথিতে সিঁদুর, চোখে সুরমা, হাতে মেহেদী ...... জারি, সারি, মুর্শিদী, মর্সিয়া, গজল, বাউল, কীর্তন ....সর্বত্রই ধর্মের চিহ্ন, অধর্ম কোথাও নেই ’’ (বাংলার লোক সংস্কৃতি, ড. ওয়াকিল আহমেদ)। মানিকগঞ্জের সংস্কৃতি মুলতঃ বাঙালী সংস্কৃতি। তাই এখানে  ধর্মীয় প্রভাব স্বাভাবিক কারনেই গভীর। এ সংস্কৃতির প্রতিটি গাঁথুনীতেই ধর্মের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। ধর্ম বিশ্বাস এবং ধর্মাচারে বৈষ্ণব এবং সুফী দর্শণের প্রাবল্য এ অঞ্চলের মানুষের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। মানুষের মধ্যে গড়ে উঠে সহমর্মিতা ও সহনশীলতা। ধর্মীয় বিরোধ এখানে কখনই বড় হয়ে উঠেনি। অসাম্প্রদায়িক এ চেতনা নিয়েই মানিকগঞ্জের হিন্দু ও মুসলমান হাজার বছর ধরে পাশাপাশি বসবাস করছে ।

 

এ অঞ্চলের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সব শ্রেনীর মানুষের মাঝেই যাদু-টোনা, ঝার-ফুক, পানি পড়া, তাবিজ-কবজের উপর বিশ্বাস লক্ষ্যনীয়। একজন হিন্দুকেও যেমন অবলীলায় পীর ফকিরের মাজার জিয়ারত ও মানত করতে দেখা যায়, তেমনি একজন মুসলমানকেও দেখা যায় বটের ঝুঁড়িতে সুঁতো বাঁধতে। রোগ বালাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দোয়া কিংবা মন্ত্র সিদ্ধ করে বাড়ি  বন্ধক রাখার রেওয়াজ চলেছে যুগের পর যুগ। দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, ঈদ, মহররমের মিছিল মানিকগঞ্জে পালিত হয় উৎসবের আমেজে। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে একে অন্যের উৎসবে স্বতঃফুর্ত অংশ নেয়া, নিমন্ত্রন করার সংস্কৃতি শত বছরের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজও বদলায়নি।

 

পরিবার-সমাজ-বিয়েঃ

মানিকগঞ্জ সদরের সংস্কৃতির অন্যন্য বৈশিষ্ট্য একান্নবর্তী পরিবার ব্যবস্থা। কৃষি নির্ভর অর্থনৈতিক জীবন ব্যবস্থায় তিন থেকে চার পুরুষ পর্যন্ত একান্নবর্তী হয়ে পরিবার কাঠামো ধরে রাখার সংস্কৃতি মানিকগঞ্জে বহু প্রাচীন। অর্থনৈতিক সংকট একান্নবর্তী ধারনায় ভাঙন ধরালেও এখনও তা মানিকগঞ্জের গ্রামীন জীবন ব্যবস্থায় ভালোভাবেই টিকে আছে। একান্নবর্তী পরিবার প্রথার পাশাপশি গ্রামীন জীবন ব্যবস্থায় ‘সমাজ’ নামের একটি অলিখিত সামাজিক কাঠামো বিদ্যমান ছিল। পাশাপাশি অবস্থিত এক বা একাধিক গ্রামের মানুষেরা মিলে এ সামাজিক কাঠামো গড়ে তুলতেন। সবার কাছে গ্রহনযোগ্য, প্রবীন, সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ এসব সমাজের অভিভাবক হিসেবে থাকতেন। বিয়ে-শাদি, নিজেদের মধ্যকার ছোটখাট ভুল বোঝাবুঝি,পারিবারিক কলহ, শালিশের মাধ্যমে মিটমাট করা থেকে শুরু করে ক্ষেত্র বিশেষে অভাব অনটনে একে অন্যকে সাহায্য করার দায়িত্বও পালন করতো এ ‘সমাজ’।

 

পেশাঃ

ভূ-প্রকৃতি আর জলবায়ুর উপর নির্ভর করে একটি অঞ্চলের মানুষের জীবিকা ও জীবনধারা। মানিকগঞ্জের ভূ -প্রকৃতির গঠন ছিল প্রধানত কৃষি সহায়ক। অবারিত মিঠে পানি আর পদ্মা যমুনার উর্বর পলির আনুকূল্যে এ জনপদে ফসলের কমতি ছিলনা। অল্প জমি, জলাভূমির মাছ, ফলবন্ত বৃক্ষরাজি এ অঞ্চলের মানুষকে অভূক্ত রাখেনি কখনো। কৃষিই ছিল শতকরা নববই জনের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম অবলম্বন। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে একই ধরনের স্বভাব, চেতনা ও অর্থনৈতিক সাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল। ফলে সংস্কৃতির রূপগত ভিন্নতা তেমনটা পরিলক্ষিত হয়নি। কৃষি এবং কৃষিজাত উপাদান-উপকরণের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছিল নানা ধরনের পেশা। কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমোর, ঋষি, পাটনী, দর্জ্জি, কৃষি শ্রমিকসহ নানা পেশার অস্তি^ত্ব ছিল উলে­খযোগ্য।

 

ঘর-বাড়িঃ

মানিকগঞ্জ সদরের গ্রাম এলাকার বাড়ি-ঘর নির্মানের ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের রুচি এবং রূপ দেখা গেছে। নীচু এলাকা হবার কারনে সাধারণ বর্ষা-বন্যাতেই জনপদগুলো পানিতে প­াবিত হয় বলে অধিকাংশ বাড়ি ঘর নির্মান করা হয় অপেক্ষাকৃত উঁচু ভিটির উপর। মানিকগঞ্জের ঘরবাড়ির মেঝে সাধারণ ভাবে মাটি দিয়ে তৈরী, ঘরের বেড়া তৈরী করা হয় পাঠখড়ি, মুলি বাঁশ  অথবা টিন দিয়ে; ঢেউটিন অথবা শন দিয়ে দেয়া হয় ঘরের চালা।

 

খাদ্যাভ্যাসঃ

মানিকগঞ্জ সদরের মানুষেরা মুলতঃ তিন বেলা  আহার করে থাকেন। ভাত, ডাল, শাক-শব্জি, মাছই  প্রধান এবং প্রিয় খাদ্য। গ্রামীন জনপদের মানুষেরা ঘরের মেঝেতে মাদুর অথবা কাঠের  পিড়িতে বসে খাবাব গ্রহন করেন।  

 

মাজার,কবর,অলৌকিকত্বে  ভক্তি-বিশ্বাস ঃ 

মানিকগঞ্জের মানুষের মনোজগতে পীর-ফকির, পাগল-দরবেশের কবর-মাজারের প্রতি রয়েছে শ্রদ্ধা এবং গভীর বিশ্বাসের একটি বড় জায়গা। পৌর এলাকার মফিজ শাহের মাঝারের মত উলে­খযোগ্য সংখ্যক মাজার, কবরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ এখনও শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। মনোবাসনা পূরণের  আকাঙ্ক্ষায় করেন মানসী (মানত)। আর এসব মাজার কবরকে কেন্দ্র করে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বসে ৭ থেকে ১৫ দিনের মেলা।

 

লোক সংগীত,কীর্তনঃ

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে কখনই সমৃদ্ধ ছিল না। তাই বলে  অভাবের তান্ডবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন কখনো  বিপন্নও হয়নি। ফলে কৃষি নির্ভর মানিকগঞ্জের মানুষের মনে কঠিন জীবন বাস্তবতার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিলো আধ্যাত্মিকতা। জনমানুষের আধ্যাত্ম চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছে মানিকগঞ্জের লোক সংগীত। জারি গান, সারি গান, বিচার গান, কবি গান, বাউল গান, মুর্শিদী, মারফতী, গাজীর গান, গাজনের গান, বেহুলার গান, ধুয়া গান, বারোমাসী গীত, মেহেদী তোলার গীত, বিয়ের গীত, ঘেটু গান, মর্সিয়া, পাঁচালী,ওন্নি গান, ব্যাঙ বিয়ের গান ইত্যাদি মানিকগঞ্জের গ্রামীন জীবনের প্রতি পরতে পরতে মিশে  আছে আজো। দুই থেকে তিন যুগ আগেও মানিকগঞ্জের গ্রামীন জনপদের  বাড়ির আঙিনা, মাঠ আর বটের ছায়ায় বসতো লোক সঙ্গীতের প্রাণবন্ত আসর। এসবের আয়োজন বর্তমানে কমে আসলেও লোক সংগীতের প্রতি নাড়ীর টান কমেনি একটুও। খোদ জেলা শহরের  বিজয় মেলা  মঞ্চের  জারি গান, বিচার গানে  ঢল নামে  হাজারো মানুষের। 

 

যাত্রা-পালাগানঃ

যাত্রা ও পালাগানের প্রতি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষের ভালোবাসা সহজাত। শত শত বছর ধরে গ্রামীণ জনপদ মাতিয়েছে যাত্রা এবং পালাগান। গনেশ অপেরা, চারণিক, বলাকা অপেরা, বঙ্গ দীপালী অপেরা, রাজলক্ষী অপেরা, নবপ্রভাত অপেরা, সত্য নারায়ন অপেরা, প্রগতি অপেরা, চারিগ্রাম যাত্রাদলসহ দেশখ্যাত অনেক যাত্রাদলের জন্ম মানিকগঞ্জে।

 

লোক শিল্পঃ

লোক শিল্পীরা প্রধানত শ্রমজীবী মানুষ। গ্রামীন মানুষের আকাঙ্ক্ষা,স্বপ্ন, অভিজ্ঞতা লোক শিল্পের উপাদান। ব্যক্তিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতা লোক শিল্পে গভীরভাবে প্রবিষ্ট এবং ব্যাপ্ত।  মানিকগঞ্জেও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। বাঁশ বেতের শিল্পকর্ম, খেজুর পাতার নকশাদার পাটি, কুলা, কাঠের কাজ, পাটের শিকা, নকশী কাঁথা, নকশা করা হাড়ি, সরার কদর সুবিদিত। মানিকগঞ্জের নারীদের সুঁতার কাজের কদর এখনও তুঙ্গে। রাজধানী ঢাকার অভিজাত হ্যান্ডিক্রাফটের দোকানের সেরা পাঞ্জাবীর সুঁই সুতোর সেরা নকশা মানিকগঞ্জের নারীদের হাতেই হচ্ছে। শুধু সুঁই সুতো নয় নকশী পিঠাতেও শিল্পরূপের প্রকাশ ঘটাতে পিছপা নয় এরা।

 

মেলাঃ

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সামাজিক ও লোক জীবনের অন্যতম উপাদান মেলা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা উপলক্ষে বসতো অসংখ্য মেলা । কোনোটি একদিনের কোনোটি চলতো মাসব্যাপি। এ মেলাগুলো মানিকগঞ্জের মানুষের প্রশান্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি। কৃষি ভিত্তিক জীবন প্রবাহে মেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যমই ছিলনা, ছিল অর্থনৈতিক গুরুত্ববাহী উৎসব। বিনোদনের পাশাপাশি লোক জীবনের চারু ও কারুশিল্পের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সৃষ্টিকারী উৎসব। মানিকগঞ্জের রথের মেলা, শিববাড়ির মেলা, গড়পাড়ার বুড়ির মেলা, বেতিলার ঐতিহাসিক রাস মেলা,উলে­খযোগ্য।

 

পিঠাপুলিঃ 

কৃষি ভিত্তিক জীবন এবং অভাবের বাড়াবাড়ি না থাকায় পিঠা তৈরী এবং আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রন করে তা খাওয়ানোর সংস্কৃতি মানিকগঞ্জে খুব জনপ্রিয়। পিঠা তৈরীর চাল, খেজুরের গুড় এবং নারকেলের দুধ এক সময় মানিকগঞ্জে সহজলভ্য ছিল বিধায় এ অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের বাহারী পিঠা তৈরীর রেওয়াজ এবং আনন্দ বিদ্যমান ছিল। মানিকগঞ্জের মত পিঠার বৈচিত্র্য দেশের খুব কম জেলাতেই খুuঁজ পাওয়া যায়। মানিকগঞ্জের নারীদের  কুলি পিঠা, নারকেল খেজুরের গুড়-চালের ভাপা পিঠা, ছিট রুটি, দুধভেজানো পিঠা, দুধকুলি , মাংস কুলি, চিতই পিঠা, তেল চিতই,তালের পিঠা, পাটিসাপ্টা, হাতেকাটা সেমাই পিঠার মত পিঠা তৈরীতে পারঙ্গমতা দেখবার মত। শুধু পিঠা তৈরীর দক্ষতাই নয়, তা তৈরী করে সবাই মিলে খাবার সংস্কৃতি নিতান্ত দিন  মজুরের পরিবারেও এখনও টিকে আছে।

 

নৌকা বাইচঃ    

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষের সার্বজনীন বিনোদন এবং উৎসবের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল নৌকাবাইচ। সদরের  কালীগংগা এবং খোদ জেলা শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে বিভিন্ন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হত নৌকাবাইচ। এসব বাইচকে কেন্দ্র করে ধনী- দরিদ্র, জমিদার-প্রজা, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে লাখো মানুষের মধ্যে বয়ে যেত উৎসবের সার্বজনীন আনন্দধারা  ।

 

১৪.খেলাধূলাঃ

খেলাধুলার ক্ষেত্রে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নিজস্ব বৃত্ত আছে। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামীন জনপদ মাতিয়ে রেখেছে দারিয়া বাঁধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, বউ ছি, হা-ডু-ডু, সাঁতার, কড়ি খেলা, বাঘবন্দি,  ষোলগুটি, লুডু, কাঁনামাছি এবং ফুটবলের মত অসংখ্য খেলা ।